ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবার ১৪শ’ রকমের প্রয়োজনীয় সরকারী ফরম ঘরে বসেই যে কেউ ডাউনলোড করতে পারবেন। এসব ফরম নিতে আর কাউকে সংশ্লিষ্ট অফিসে অফিসে যেতে হবে না। একই সঙ্গে দেশের মানুষ অনলাইনে ৪শ’ রকমের সরকারী সেবাও পাবেন। এসব সেবা দেবে এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)। সেবা আরও সহজ করার জন্য ভয়েস এক্সেসও দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এটুআই। ভয়েস এক্সেস পেলে মানুষ আরও সহজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জাতীয় তথ্য বাতায়নের যে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। এজন্য তথ্য বাতায়ন আরও কার্যকর করতে সম্প্রতি এটুআই ও রবি আজিয়াটা লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সূত্র জানায়, এই সমঝোতা স্মারকে এটুআইয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও এটুআই প্রকল্পের পরিচালক কবির বিন আনোয়ার ও রবি আজিয়াটার পক্ষে স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চীফ কর্পোরেট এ্যান্ড পিপল অফিসার (সিসিপিও) মতিউল ইসলাম নওশাদ। সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের ভয়েস এক্সেস বাস্তবায়নের জন্য এক্সেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) ও রবি আজিয়াটার যৌথ উদ্যোগে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হবে। ফলে যে কোন মোবাইল অপারেটর ব্যবহারকারী গ্রাহকরা সর্বনিম্ন কলরেটে ভয়েস কল, এসএমএস, আইভিআর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ই-মেল ব্যবহার করতে পারবেন। আর তাতেই মিলবে জাতীয় তথ্য বাতায়নের সব তথ্য। এছাড়া গ্রাহককেন্দ্রিক ই-সেবা, মোবাইল এ্যাপস বাস্তবায়নে রবি এটুআইকে সহায়তা দেবে।
জানা গেছে, জাতীয় তথ্য বাতায়ন (িি.িনধহমষধফবংয.মড়া.নফ) বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সরকারী তথ্য বাতায়ন। ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমি-উনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। সব সরকারী ওয়েবসাইটকে একত্রে সংযুক্ত করে প্রতিটি নাগরিকের তথ্য ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন করা হয়েছে। জাতীয় তথ্য বাতায়নে ২৫ হাজারের বেশি ওয়েবসাইট যুক্ত রয়েছে। জাতীয় তথ্য বাতায়নের সঙ্গে দেশের ৬১ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ৩৫১ অধিদফতর ও অন্যান্য অফিস, ৮ বিভাগ, ৬৪ জেলা, ৪৮৯ উপজেলা, ৪ হাজার ৫৫০ ইউনিয়নসহ মোট ৪৩ হাজারের বেশি সরকারী অফিস যুক্ত রয়েছে। দেশের যে কোন নাগরিক তথ্য বাতায়ন থেকে তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় তথ্য বাতায়নে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন কনটেন্ট রয়েছে। ৪শ’র বেশি সরকারী সেবাপ্রাপ্তির বিস্তারিত বিবরণ দেয়া আছে। এছাড়া প্রয়োজনে লাগবে এমন এক হাজার ৪শ’ সরকারী ফরম রয়েছে। এসব ফরম ডাউনলোড করে নাগরিকরা ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্য কাউকে সংশ্লিষ্ট কোন অফিসে বা কার্যালয়ে যেতে হবে না।
এটুআই সূত্র মতে, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য সামনে নিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন এবং দেশের মানুষের জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এটুআই বর্তমানে যেসব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে, ইমপ্রুভিং ডেমোক্রেসি থ্রু পার্লামেন্টারি ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (আইপিডি), এক্সেস টু ইনফরমেশন, ইমপ্রুভিং পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন এ্যান্ড সার্ভিস ডেলিভারি থ্রু ইন ই-সলিউশন: ইমপ্রুভিং গ্রিভেন্সি সিস্টেম, কনস্ট্রাকশন অব উপজেলা এ্যান্ড রিজিওনাল সার্ভার স্টেশনস ফর ইলেক্টোরাল ডাটাবেজ, স্ট্রেনদেনিং ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ, আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেনসিং এক্সেস টু সার্ভিসেস, স্ট্রেনদেনিং অব বাংলাদেশ পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার, ডিজিটালাইজেশন অব বিপিএটিসি, ডিপেনিং এমটিবিএফ এ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং ফাইন্যান্সিয়াল এ্যাকাউন্টেবিলিটি, স্ট্রেংদেনিং গবর্নেন্স ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট, ইমপ্লিমেন্টেশন অব ডিজিটাল একনেক, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা, ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ প্রপার্টি ডাটাবেজ, বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর ডিজিটাল ম্যাপিং, ইন্ট্রোডাকশন অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি), তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম এ্যান্ড ই-হেল্্থ, বিএফডিসিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তক, বাংলাদেশ বেতারের মধ্যম তরঙ্গ ট্রান্সমিটার ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকায়ন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, সমবায় অধিদফতরের আইসিটি ও ই-সিটিজেন সার্ভিস উন্নয়ন, কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে ডিজিটাল কৃষি তথ্যের প্রচলন ও গ্রামীণ জীবন মানোন্নয়ন, ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি, জেলেদের নিবন্ধন, স্ট্রেনদেনিং সেটেলমেন্ট প্রেস, ম্যাপ প্রিন্টিং প্রেস এ্যান্ড প্রিপারেশন অব ডিজিটাল ম্যাপ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়ন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, এস্টাবলিশিং ডাটা সেন্টার এ্যান্ড টেলিকমিনিকেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারী সেবা দেয়া হচ্ছে এটুআই প্রোগ্রাম থেকে।
এটুআইয়ের সঙ্গে রবির চুক্তির পর সেবা দানের ক্ষেত্রে আরও ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।